কয়লা থেকে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ?

বর্তমানে আমরা বিদ্যুৎ শক্তিকে তো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। আমাদের বাড়ির লাইট, পাখা, টিভি, মোবাইল ফোন চার্জ থেকে শুরু করে এ.সি., ফ্রিজ সবই আমরা ইলেক্ট্রিসিটি বা বিদ্যুৎ শক্তির মাধ্যমে চালিয়ে থাকি। অনেক বড়ো বড়ো কলকারখানাও আজ বিদ্যুৎ শক্তির ওপর নির্ভরশীল। তা এই বিদ্যুৎ শক্তি কিভাবে উৎপাদন করা হয় সে বিষয়টি অনেকেরই জানা নেই। আজকের দিনে বিভিন্ন প্রকার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে পর্যাপ্ত বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে থার্মাল পাওয়ার বা তাপবিদ্যুৎ শক্তি। অর্থাৎ তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ।

তাই আজ আমরা আলোচনা করবো, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিভাবে তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া

power-plant-stucture-in-bengali

বিশাল আয়তন ফাঁকা জায়গা ও অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে পাওয়ার প্লান্ট বা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি নির্মাণ করা হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে শুধু অনুকূল জলবায়ুই নয়, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, যাতায়াত ব্যবস্থার যথাযথ সুবিধা পর্যাপ্ত পরিমাণ জল সেখানে থাকা চায়। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান কাঁচামাল হলো কয়লা। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় তাপ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হয়।

তাই, সর্বপ্রথম কয়লা খনি অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ কয়লা সংগ্রহ করে তা রেলপথ কিংবা সড়কপথের মাধ্যমে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পৌঁছে দেওয়া হয়। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের কয়লা গুলিকে ওর মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয়। এবং নিম্ন মানের কয়লা গুলিকে আলাদা করে বাদ দেওয়া হয়। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের কয়লা গুলি বেছে নিয়ে সেগুলিকে একেবারে গুঁড়ো করে ফেলা হয়। একেবারে গুড়ো হয়ে গেলে সেগুলি ব্যবহারের উপযুক্ত হয়ে ওঠে।

এরপর গুঁড়ো কয়লাগুলিকে ধীরে ধীরে মেশিনের মাধ্যমে বয়েলার মেশিনে পাঠানো হয়। বয়েলার মেশিন হলো সেই মেশিন যেখানে কয়লা জ্বালিয়ে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন করা হয় এবং সেই তাপ এর মাধ্যমে জলকে উত্তপ্ত করে বাষ্পে পরিণত করা হয়। এই মেশিনের নিচের অংশে কয়লা জালানো হয়। এবং মেশিনের উপরের অংশে অসংখ্য পাইপ থাকে যেগুলি জলে পূর্ণ থাকে। নিচের থেকে জলকে পাম্পের মাধ্যমে ওই পাইপ গুলিতে পৌঁছে দেওয়া হয়। বয়েলার মেশিনের ওপরের অংশে জলের পাইপ গুলিকে এমন ভাবে যুক্ত করা হয়, যাতে উৎপন্ন তাপের সর্বোচ্চকে ব্যবহার করে জলকে দ্রুত বাষ্পে পরিণত করা যায়।

যেহেতু বয়েলার মেশিনের নিচের অংশে গুঁড়ো কয়লাকে জালানো হয়, তাই প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয়। এই কালো ধোঁয়াকে ফিল্টার করে চিমনির মাধ্যমে বাইরে বের করে দেওয়া হয়।

উপরের পাইপ গুলিতে জল বাস্পে পরিণত হতে থাকলে সেই বাষ্প কে একত্রিত করে টারবাইন ফ্যান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রচণ্ড চাপ যুক্ত বাষ্প খুব দ্রুতগতিতে টারবাইন ফ্যানের মধ্যে দিয়ে যাওয়াই টারবাইন ফ্যান টিও দ্রুতগতিতে ঘুরতে শুরু করে। টারবাইন ফ্যানটি আবার পাশে থাকা একটি জেনারেটরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফলে টারবাইনের চাকা দ্রুত ঘুরতে থাকায় জেনারেটরের এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে থাকে।

এক একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এইভাবে অনেকগুলি টারবাইন কে কাজে লাগানো হয় যার। কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। এছাড়াও উৎপন্ন বিদ্যুতের ভোল্টেজকে পাওয়ার ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কারণ ওই বিদ্যুৎকে অনেক দূরবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হয়।

এবার যাওয়া যাক কুলিং টাওয়ারের বিষয়টিতে। টারবাইনে ব্যবহারের পর জলীয় বাষ্পের চাপ যখন একেবারে কমে যায়, তখন ওই জলীয় বাষ্পকে পৌঁছে দেওয়া হয় পার্শবর্তী কুলিং টাওয়ারে। যেখানে ওই জলীয় বাষ্পগুলি ঠান্ডা হয়ে পূনরায় জলে পরিণত হতে থাকে।

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন