হিমালয় পর্বতমালা পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা। আর এই পর্বতমালায় অবস্থান করে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট এবং দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ গডউইন অস্টিন। অর্থাৎ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থানও এই হিমালয় পর্বতমালাতেই অবস্থিত।
এই হিমালয় পর্বতমালায় ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশের ঢালের মত দাঁড়িয়ে থেকে উত্তর-পূর্ব দিকের বহিঃশত্রুর হাত থেকে ভারতকে রক্ষা করেছে। সেই সঙ্গে মধ্য এশিয়ার কনকনে শীতল জলবায়ুর ভারতে প্রবেশ করাকে বাধা দিয়েছে। এবং হিমালয় থেকে সৃষ্টি বিভিন্ন নদীগুলি ভারতবর্ষের ভূমিকে শস্য শ্যামলা করে তুলেছে তাছাড়া এই নদীগুলি ভারতের প্রয়োজনীয় জলের চাহিদাও মেটাচ্ছে।
তবে ভূ-বিজ্ঞানীদের অনুমান হিমালয় পর্বতমালা একেবারে খুব একটা প্রাচীন নয়। তাদের মতে এটি একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বত। যার অর্থ নতুন ভাঁজ প্রাপ্ত পর্বত। এমনকি এর নির্মাণ কার্য বর্তমানেও চলেছে। অর্থাৎ পৃথিবী সৃষ্টির অনেক পরে বিশেষ ভূগাঠনিক কারণবশত পর্যায়ক্রমে এই সুউচ্চ পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে।
আজকে হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির সেই বিশেষ কারণগুলি আলোচনা করব।
আমরা জানি আমাদের পৃথিবীতে পাঁচটি মহাসাগর ও সাতটি মহাদেশ রয়েছে। যার মধ্যে আমাদের ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের অংশ। কিন্তু ভূ-বিজ্ঞানিদের অনুমান আজ থেকে প্রায় 25 কোটি বছর আগে মহাদেশ গুলির অবস্থান এরকমটা ছিলনা। তাদের অনুমান সেই সময় পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশ গুলি একসাথে অবস্থান করতো। অর্থাৎ পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগ গুলি নিয়ে একটিই ভূখণ্ড ছিল। যাকে ভু বিজ্ঞানীরা প্যানজিয়া নামে উল্লেখ করে থাকেন। এবং এই প্যানজিয়া বাদে সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ছিলো বিশাল জলরাশি বা মহাসমুদ্র যাকে প্যানথালাসা বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে এটা শুধু কাল্পনিক অনুমান তা নয়। মহাদেশ গুলির আকৃতি ও অভ্যন্তরীণ ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়াগুলিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা এরূপ মতবাদ প্রকাশ করেন।
তাদের ধারণা আজ থেকে প্রায় 25 কোটি বছর আগে প্যানজিয়া ভাঙতে শুরু করে। কারণ পেনজিয়া নামক স্থলভাগটি বেশ কয়েকটি প্লেট বা পাতের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। আর ওই প্লেটগুলি ভূ-অভ্যন্তরের পরিচালন স্রোতের কারণে নড়াচড়া করতে থাকে এবং একে অপরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। ফলে এক সময় প্যানজিয়া দুটি খন্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। যার উত্তর দিকের অংশটিকে অ্যাঙ্গারাল্যান্ড ও দক্ষিণ দিকের অংশটিকে গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
পরবর্তীতে অ্যাঙ্গারাল্যান্ড ভেঙে গিয়ে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশ গঠিত হয়। এবং গন্ডোয়ানাল্যান্ড ভেঙে গিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ওশিয়ানিয়া ও এন্টার্কটিকা মহাদেশ গঠিত হয়। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় আমাদের ভারতের অবস্থান তখন এশিয়া মহাদেশে ছিল না। কারণ ভারতীয় উপদ্বীপটি ছিল দক্ষিণের গন্ডয়ানাল্যান্ডের অংশ।
পরবর্তীকালে পাত সঞ্চালনের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশীয় অংশটি গন্ডোয়ানাল্যান্ড থেকে ভেঙে গিয়ে উত্তরে এশিয়া মহাদেশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এবং একসময় ভারতীয় উপমহাদেশীয় পাতটি এশিয়া মহাদেশের ইউরেশিয়া পাতের সাথে ধাক্কা খায়। এই সংঘর্ষের ফলে ভারতীয় পাতটি ইউরেশিয়া পাতের নিচের দিকে চলে যায়। এবং ওপরের অংশে থাকা পাললিক শিলাস্তর দুদিকের পার্শ্বচাপের ফলে ভাঁজ প্রাপ্ত হয়ে উপরে উঠে যায়। এবং সৃষ্টি হয় সুবিশাল হিমালয় পর্বতমালা।
এই পাত গুলি আজও সঞ্চালিত হচ্ছে এবং দুটি পাতের সংঘর্ষ এখনো চলছে। যার ফলে হিমালয়ের সংলগ্ন অঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়ে থাকে।