ডেড সী বা মৃত সাগর নামটা কম বেশি আমাদের অনেকেরই শোনা আছে। ছাত্রজীবনে আমরা হয়তো পড়েছি যে, স্থলভাগের সর্বনিন্ম বা সবথেকে নিচু স্থান হলো ডেড সী বা মৃত সাগর। তবে এটা শুধু সবথেকে নিচু স্থান বলেই বিখ্যাত তা নয়। এই জলাশয়ে লক্ষ্য করা যায় কয়েকটি অদ্ভুত বিষয়। যেমন এই জলে কোনো জলজ প্রাণী বা মাছ বসবাস করতে পারেনা। আবার এই জলে কেউ সাঁতার না জানলেও, চাইলে ইচ্ছা করেও ডুবতে পারবেনা। অর্থাৎ মৃত সাগরের জল সর্বদা সবাইকে ভাসিয়ে রাখবে। আজকে আমরা এই ডেড সী সম্পর্কে এরকম কয়েকটি অদ্ভুত তথ্য আলোচনা করবো।
image source: pixabay.com |
এশিয়া মহাদেশের পশ্চিমাংশে জর্ডান, ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সংলগ্ন স্থানে এই ডেড সি নামক জলাশয়টির অবস্থান। জলাশয় টি 40,650 বর্গ কিলোমিটার এরিয়া জুড়ে বিস্তৃত। এবং জলাশয়টির গড় গভীরতা হলো 120 মিটার। তবে এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 420 মিটার নিচে অবস্থিত।
সাধারণ সমুদ্রজলের থেকে এই জলের লবণাক্ততা অনেক বেশি। এই জলে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড ও সোডিয়াম ক্লোরাইড এর মত খনিজ লবণ গুলি প্রচুর মাত্রায় উপস্থিত রয়েছে। যার কারণে এই জলের শতকরা 30% লবণ। এত বেশি লবণাক্ততার কারণে এই জলে কোনো জলজ প্রাণী বসবাস করতে পারেনা। এমনকি জর্দান নদীর থেকে কোনো মাছ এই জলাশয়ে প্রবেশ করলেই তা সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। আর তাই এটিকে ডেড সি বা মৃত সাগর বলা হয়ে থাকে। তবে এই জলে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক ও অণুজীবদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
লবণ ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ প্রচুর মাত্রায় উপস্থিত থাকার কারণে এই জলের ঘনত্ব সাধারণ জলের থেকে অনেক বেশি। এই জলের ঘনত্ব 1.24 কিলোগ্রাম/ লিটার। যা মানুষের শরীরের ঘনত্বের থেকেও অনেক বেশি। তাই কোনো ব্যক্তি এই জলে নামলে সে একা একাই এই জলে ভাসতে থাকবে। কারণ মৃত সাগরের বেশি ঘনত্বের জল, অপেক্ষাকৃত কম ঘনত্বের মানুষের শরীরকে উদ্ধমুখি বল প্রয়োগ করে সর্বদা ভাসিয়ে রাখবে।
মৃত সাগরের এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন বহু পর্যটক মৃত সাগর ভ্রমণে আসেন। তাই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও এই স্থানটি বিশেষ প্রসিদ্ধ।
ডেড সী বা মৃত সাগর নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে ভূ-প্রকৃতিগত অবস্থান ও বিভিন্ন প্রকার খনিজ উপাদানের উপস্থিতি থাকায় এই জলে রয়েছে এক বিশেষ গুণ। অনেকের মতে, এই জলে স্নান করলে, শারীরিক নানান সমস্যার ক্ষেত্রে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।