কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে?

বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হলো স্যাটেলাইট। আজকের দিনে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অনেক অসম্ভব কাজই সম্ভব হচ্ছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এরকম অনেক পরিষেবা আছে যেগুলি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। GPS সিস্টেম থেকে শুরু করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা, DTH মাধ্যমের দ্বারা টিভি চালানো, পৃথিবীর কোনো স্থান পর্যবেক্ষণ করা কিংবা দূর দেশে ফোন কল করা, সবই এই স্যাটেলাইট সিস্টেমের মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে। আপনার যদি এই স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে একদম সঠিক ঠিকানায় এসেছেন। আজকে আমরা আলোচনা করবো কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট সম্পর্কে। 

কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট কী?

what-is-satellite

ইংরাজি স্যাটেলাইট শব্দটির বাংলা অর্থ হলো উপগ্রহ। অর্থাৎ উপগ্রহ হল সেই বস্তুগুলি যেগুলি কোন গ্রহকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। আর আমরা জানি আমাদের পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হলো চাঁদ। আসলে হ্যাঁ চাঁদই পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ যেটি প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে এবং কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে চলেছে। তবে আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় চাঁদ নয়। বিষয় হলো মানুষের তৈরি সেইসব কৃত্তিম উপগ্রহ বা কৃত্তিম স্যাটেলাইট, যে গুলি মহাকাশে থাকা অবস্থায় অবিরাম পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে চলেছে।

স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে?

কোন তারের মাধ্যম ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ডাটা ট্রান্সফার করার ক্ষেত্রে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ বা রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। এই তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ বা রেডিও তরঙ্গ সর্বদা সরলরেখা বরাবর সোজা পথে চলাচল করতে পারে। পৃথিবীতে অবস্থিত কাছাকাছি দুটি স্থানের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করতে গেলে ওই দুই স্থানে বসানো দুটি এন্টেনার মাধ্যমেই তা সম্ভব হবে। তবে যদি অনেক দূরবর্তী স্থানে কিংবা পৃথিবীর ঠিক একেবারে অপরপ্রান্তে তথ্য আদান প্রদান করতে হয় তাহলে শুধুমাত্র দুই স্থানে বসানো দুটি এন্টেনার মাধ্যমে তা সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের পৃথিবীটা গোলাকার। আর তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ বা রেডিও তরঙ্গ গোলাকার পথে চলাচল করতে পারে না।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি অ্যান্টেনাকে আকাশের অনেক উঁচুতে স্থাপন করা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক দূরবর্তী স্থানগুলি সরলরৈখিক পথে যুক্ত হতে পারবে। আর এই কাজটিই করবে আকাশে ভাসমান স্যাটেলাইটের এন্টেনা। অর্থাৎ নিচ থেকে প্রথমে সিগন্যালকে স্যাটেলাইটে পাঠানো হবে এবং তারপর স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ওই সিগন্যাল ছড়িয়ে পড়বে।

how-to-work-satellite

কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটকে কিভাবে ভাসমান অবস্থায় রাখা হয়?

আমরা জানি ভারী কোন বস্তুকে বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় রাখতে হলে প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হবে। কারণ বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় থাকার জন্য বস্তুটিকে সর্বদা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে ক্রিয়া করতে হবে। কিন্তু আমাদের কাছে এত বিশাল পরিমান শক্তির উৎস নেই যে সারাক্ষন শক্তি সরবরাহ করে বস্তুটিকে বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় রাখতে পারবে। তাই বিজ্ঞানীরা প্রথমে পৃথিবীকে পরিক্রমকারী চাঁদকে ভালো ভাবে লক্ষ করলো। এবং এরপর বোঝা গেল বস্তুটিকে ভাসমান অবস্থায় রাখতে হলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বাইরে মহাকাশে নিয়ে যেতে হবে। আর বস্তুটিকে মহাকাশের এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে বস্তুটির গতিশীল অবস্থা বজায় থাকবে এবং পৃথিবীর সামান্য মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকবে।

ঠিক এই সূত্র ব্যবহার করেই স্যাটেলাইটকে মহাকাশে ভাসমান অবস্থায় রেখে পৃথিবীর চারিদিকে পরিক্রম করানো হয়। আর পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইট কে রকেটের মাধ্যমে মহাকাশের সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

rocket-image

এরপর স্যাটেলাইটকে শুধুমাত্র মহাকাশে ভাসমান অবস্থায় থাকলেই হবে না, যে কাজে স্যাটেলাইটটিকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে সেই কাজগুলি পরিচালনা করতে হবে। তাই স্যাটেলাইটে প্রতিনিয়ত নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হবে। এর জন্য স্যাটেলাইটে বেশ কয়েকটি সোলার প্যানেল বসিয়ে দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে সৌরশক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, এবং বছরের পর বছর স্যাটেলাইটে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ শক্তির যোগান দেয়।

বিভিন্ন কাজের ভিত্তিতে এক একটি স্যাটেলাইটকে আলাদা আলাদা দূরত্বে স্থাপন করা হয়। 


*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন