বায়ুকল কিভাবে কাজ করে এবং বায়ু থেকে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ?

শক্তি এমন একটি জিনিস যাকে আমরা সৃষ্টিও করতে পারি না আবার ধ্বংসও করতে পারি না। আমরা যেটা করতে পারি সেটা হল শক্তির রূপান্তর। অর্থাৎ এক শক্তিকে আর এক শক্তিতে পরিবর্তিত করা। আর এই ধারনার ওপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি গুলিকে রূপান্তরিত করে প্রয়োজনমতো ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই একটি উদাহরণ হল উইন্ড টারবাইন বা বায়ুকল। যার মাধ্যমে বায়ুপ্রবাহের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

এই উইন্ড টারবাইন বা বায়ুকল কিভাবে কাজ করে, তার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি একদম প্রথম থেকে স্টেপ বাই স্টেপ নীচে আলোচনা করা হলো।

how-to-work-wind-turbine

উইন্ড টারবাইন বসানোর ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যেটির প্রয়োজন হয় সেটি হল উইন্ড টারবাইন বা বায়ু কলের অনুকূল পরিবেশ। অর্থাৎ, যেসব অঞ্চলে বায়ু প্রায় সারা বছরই নিয়মিতভাবে এবং নির্দিষ্ট গতিতে প্রবাহিত হয় সেইসব অঞ্চলগুলি সাধারণত বেছে নেওয়া হয় উইন্ড টারবাইন বসানোর জন্য। এক একটি উইন্ড টারবাইন এর উচ্চতা প্রায় 100 মিটার বা তার বেশিও হয়ে থাকে। তাই বিস্তীর্ণ ফাঁকা অঞ্চলেও প্রয়োজন হয়। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য একই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি উইন্ড টারবাইন বসানো হয়।

সঠিক জায়গা বেছে নেওয়ার পর শুরু করা হয় উইন্ড টারবাইনের এর নির্মাণ কার্য। প্রথমে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে ধাপে ধাপে টারবাইনের টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়। এই টাওয়ারটি যথেষ্ট শক্তপোক্ত ও মজবুতভাবে তৈরি করা হয়। কারণ এটির উপরেই বসানো হয় টারবাইন কেবিনেট, গিয়ার ও ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেটর। এবং এটির ওপরেই ভর করে থাকে বিশাল ওজনের টারবাইনের ব্লেড গুলি।

টাওয়ারটি তৈরি করা সম্পূর্ণ হলে টাওয়ারের ওপর প্রথমে টারবাইন কেবিনেট টি বসানো হয়। এরপর ওই কেবিনেটের সঙ্গে এক এক করে রোটার, গিয়ার, জেনারেটর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ গুলি যুক্ত করা হয়। এবং তারপর রোটারের সঙ্গে এক এক করে টারবাইনের ব্লেড গুলি যুক্ত করা হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বায়ু প্রবাহের দ্বারা সর্বপ্রথম টারবাইনের ব্লেড গুলি ঘুরবে। ব্লেড গুলি যেহেতু রোটারের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাই রোটারটিও ঘুরতে থাকবে। রোটারটি আবার যুক্ত থাকে একটি গিয়ার বক্সের সঙ্গে। ধীর গতিতে বায়ুপ্রবাহের সময় রোটারটি খুবই আস্তে আস্তে ঘোরে। তাই রোটারের ওই অল্প ঘূর্ণয়নকে কাজে লাগিয়ে বেশি ঘূর্ণয়ন উৎপন্ন করে জেনারেট পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ায় গিয়ার সিস্টেম টির কাজ। আর জেনারেটর হলো সেই যন্ত্র যেটির ঘূর্ণয়নের ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

কেবিনেটের ভিতরকার যন্ত্রাংশ গুলি যথা স্থানে বসানো হয়ে গেলে টারবাইনের ব্লেড গুলি এক এক করে রোটারের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে বায়ু সবসময় একই দিক থেকে প্রবাহিত হয়না, বায়ু এক এক সময় এক এক দিক থেকে প্রবাহিত হয়। কখনো জোরে প্রবাহিত হয় আবার কখনো আস্তে। তাই, উইন্ড টারবাইন গুলিতে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য উইন্ড টারবাইন টিতে বসানো হয় কয়েকটি সেন্সর। যেগুলি বায়ুপ্রবাহের গতি ও অভিমুখ নির্ণয় করে। অর্থাৎ এই সিস্টেম টি এমন ভাবে কাজ করে যে, বায়ু যখন যেই দিক থেকে প্রবাহিত হবে তখন টারবাইনটির অভিমুখ সেই দিকে ঘুরিয়ে দেবে। আবার বায়ু যখন খুব জোরে প্রবাহিত হবে তখন প্রয়োজন মতো ব্রেক চেপে টারবাইনের গতিকে নিয়ন্ত্রণে আনবে।

টারবাইনের ওপরের কাজগুলি সম্পূর্ণ হলে টারবাইন টাওয়ারের গোড়ায় বসানো হয় একটি স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার। উপরের জেনারেটরের কানেকশন সরাসরি যুক্ত থাকে এই স্টেপ আপ ট্রান্সফরমারের সঙ্গে। জেনারেটরের উৎপন্ন বিদ্যুতের ভোল্টেজ কে অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার টি ব্যবহার করা হয়। কারণ অন্য টারবাইন গুলির বিদ্যুতের সঙ্গে সমতা রেখে এই বিদ্যুৎকে অনেক দূরবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হয়।

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন