পৃথিবীর পাঁচটি অদ্ভুত রহস্যময় জায়গা

আমাদের পৃথিবীর কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা যেমন মেঘ, বৃষ্টি, দিনরাত্রি, ঋতু পরিবর্তন ইত্যাদি, আমাদের কাছে হয়তো নতুন কিছু নয়। কারণ এই ঘটনা গুলির সাথে আমরা ছোট বেলার থেকেই পরিচিত। আর আমরা জানি এই ঘটনা গুলি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই ঘটে থাকে। কিন্তু আমাদের পৃথিবীতে এমন কিছু স্থান আছে যে স্থান গুলিতে ঘটে থাকে কিছু অদ্ভুত প্রাকৃতিক ঘটনা। যে অদ্ভুত প্রাকৃতিক ঘটনা গুলি আমাদেরকে আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। আজকে এরকমই পাঁচটি অদ্ভুত স্থান তথা অদ্ভুদ প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করব।

1. সেইলিং স্টোন: 

sailing_stones


আপনি কি কখনো এমন কোনো পাথরের কথা শুনেছেন যেটি একা একাই এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় চলাচল করতে পরে? হয়তো শোনেননি! না শোনা টাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা জানি পাথর হলো একটি জড়ো বস্তু। তাই এমনটা কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডা রাজ্যের মাজখানে অবস্থিত ডেথ ভেলি ন্যাশনাল পার্কে ঘটে থাকে এক অদ্ভুত ঘটনা। এই জায়গাটিতে থাকা কিছু পাথর রাতারাতি নিজেদের স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। যদিও সামনাসামনি কেউ এই পাথরগুলিকে চলাচল করতে দেখেনি। তবে বেশ কয়েকদিন ধরে যদি পাথর গুলির অবস্থান লক্ষ করা যায় তাহলে স্থান পরিবর্তনের বিষয়টি অবশ্যই বোঝা যাবে। এছাড়া, মাটিতে ঘষা খাওয়ার দাগগুলি থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায় যে পাথর গুলি সত্যিই স্থানান্তরিত হয়েছে। আর এই পাথর গুলির আশেপাশে মানুষ কিংবা অন্য কোন প্রাণীরও কোনরকম চিহ্ন পাওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল তাহলে কারোর সাহায্য ছাড়াই কিভাবে এই পাথর গুলি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল করছে? ঘটনাটি প্রথম সামনে আসার পর থেকে অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক রকম ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু কেউই ঘটনাটির সঠিক ব্যাখ্যা দিতে সফল হননি। এরপর 2014 সালে একদল বিজ্ঞানী জি পি এস ও টাইম ল্যাপস ভিডিওর মাধ্যমে এই ঘটনাটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেন। এবং তারা এই সম্পূর্ণ ঘটনাটিকে ক্যামেরাবন্দী করেন। দেখা যায় রাত হলেই প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে এই স্থানটিতে একটি পাতলা বরফের স্তর তৈরি হয়। এবং সকাল হওয়ার সাথে সাথে ওই বরফ গলে জলে পরিণত হয়। আর ওই জলের কারণে ওই স্থানের মাটি পিছলে এবং স্যাঁত সাথে হয়ে যায়। এমন সময় ওই স্থান বরাবর প্রবাহিত  হতে থাকে জোরালো হওয়া। আর সেই হওয়ার ধাক্কাতেই পিছলে মাটির ওপর থাকা পাথরগুলি নিজেদের স্থান থেকে একটু একটু করে সরতে আরম্ভ করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আবার জলগুলি সম্পূর্ণরূপে বাষ্পে পরিণত হয়ে যায়। আর শুকনো মাটিতে থেকে যায় পাথরে ঘষা খাবার ওই দাগ।

2. ম্যাগনেটিক হল: 

magnetic_hill


পাহাড়ের ঢাল বরাবর প্রতিটি বস্তু নিচের দিকে নামবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি কি কখনো এমন কোনো পাহাড়ের কথা শুনেছেন যে পাহাড়ের ঢাল বরাবর প্রতিটি বস্তু উপরের দিকে উঠতে চাই। এরকমই একটা পাহাড় রয়েছে আমাদের ভারতেই। লাদাখের লেহ তে একটা পাহাড় রয়েছে যাকে ম্যাগনেটিক হিল বলা হয়ে থাকে। এই পাহাড়ের সংলগ্ন অঞ্চলে যে রাস্তা রয়েছে সেখানে ঘটে থাকে এক অদ্ভুত ঘটনা। এখানে কোন গাড়িকে স্টার্ট বন্ধ করে নিউট্রাল অবস্থায় রেখে দিলে গাড়ি একা একাই টাল বরাবর নিচে না গিয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে। অনেকে মনে করতেন এই পাহাড়ে কোন শক্তিশালী চুম্বক শক্তি রয়েছে। যার কারণে সবকিছুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এই অনুমান একেবারে ভুল প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে এই অঞ্চলটিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণের পর জানা যায় এটি হলো এক প্রকার অপটিক্যাল ইল্যুশন। আসলে এই অঞ্চলের আশেপাশের থাকা পাহাড়গুলি এমনভাবে অবস্থান করেছে যার কারণে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় রাস্তাটি ওপরের দিকে গিয়েছে। কিন্তু রাস্তাটি আসলে নিচের দিকে ঢালু। তাই গাড়ি ঢাল বরাবর নিচে নামতে থাকলে ওই স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে মনে হয় গাড়িটি উপরের দিকে উঠছে।

3. লেক হিলার: 

lake_hillier


আপনি হয়তো আজ পর্যন্ত অনেক নদী, পুকুর কিংবা সমুদ্র দেখেছেন। কিন্তু কখনো কি এমন কোনো পুকুর বা জলাশয় দেখেছেন যার জল গোলাপী রঙের? বন্ধুরা অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাংশের সমুদ্র উপকূলে লেক হিলিয়ার নামে একটি জলাশয় রয়েছে। এই জলাশয় টির জলের রং গোলাপি। গুগল ম্যাপে গিয়ে লেক হিলিয়ার অস্ট্রেলিয়া লিখে সার্চ করলেই আপনি এটাকে খুঁজে পেয়ে যাবেন। তবে এখন প্রশ্ন হল এই জলাশয়তির জল এমন কেন? এর উত্তরে অনেকেই অনেক রকম মতবাদ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আসল সত্যটি তখনই সামনে আসে যখন বিজ্ঞানীরা এই জলাশয়ের জলকে ল্যাবে নিয়ে উন্নত অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। দেখা যায় এই জলে উপস্থিত রয়েছে ডুনালিয়েলা স্যালিনা সহ বেশ কয়েক প্রকার অণুজীব। বিজ্ঞানীদের মতে এই অণুজীব গুলির কারণেই এই জলাশয়ের জল গোলাপি রং ধারণ করেছে।

4. ফেইরি সার্কল: 

fairy_circle


বন্ধুরা আফ্রিকা মহাদেশের নামিবিয়া দেশে 'নামিব' নামে একটি মরুভূমি আছে। আর এই মরুভূমিতেই দেখা যায় এক অদ্ভুত দৃশ্য। বিস্তীর্ণ মরুভূমি এলাকা হওয়ায় এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ একেবারেই কম। তবুও এখানে অপেক্ষা কিছু নিচু অঞ্চলের দিকে কিছু ঘাস জন্মায়। আর ওই ঘাসেদের মাঝখানে মাঝখানেই রয়েছে বৃত্তাকার ফাঁকা জায়গা। এগুলিকে ওপর থেকে দেখলে এমন মনে হয় যেন প্রতিটি বৃত্তাকার ফাঁকা জায়গা একই রকম দূরত্ব বাদে বাদে অবস্থান করেছে। বৃত্তগুলির ব্যাস সাধারণত 2 থেকে 12 মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর সঠিক কারণ নিয়ে অনেকের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে ওই অঞ্চলে বসবাসকারী এক প্রজাতির উইপোকার কারণে ওই ঘাস বিহীন সার্কেল গুলি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই কারণটিকে একেবারে সঠিক বলে মানা যায়না। কারণ এরকমই কিছু সার্কেল অস্ট্রেলিয়াতেও দেখা যায়। আর সেই অঞ্চলে এরকম কোনো উইপোকার অস্তিত্ব মেলেনি। এটি নিয়ে আরো গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা আরো একটি কারণ খুঁজে বার করে। সেটি হলো যেখানে যেখানে এই সার্কেল গুলি সৃষ্টি হয়েছে সেখানে আসলে জল মাটির একটু গভীরে থাকে। আর তাই ঘাস ওই জায়গা গুলি থেকে জল সংগ্রহ করতে পারেনা। ফলে ওই জায়গা গুলি ফাঁকা থেকে যায়।

5. অরোরা: 

aurora

আপনি হয়তো আকাশে অনেক রকমের রং দেখেছেন। কিন্তু আপনি কি কখনো আকাশে এরকম  রঙিন আলোর ছোটাছুটি দেখেছেন? হয়তো দেখেননি। কারণ আমাদের এখান থেকে আকাশে কখনই এই ধরনের রঙিন আলো দেখা যায়না। এই অদ্ভুত মনমুগ্ধকর দৃশ্য টি কিন্তু অন্য কোনো গ্রহের নয় বরং আমাদের পৃথিবীরই। এটি দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে পৃথিবীর উত্তর মেরু কিংবা দক্ষিণ মেরুতে। উত্তর মেরু কিংবা দক্ষিণ মেরুতে রাত হলেই এরকম অদ্ভুত আলোর ছোটাছুটি চোখে পড়ে। এখন প্রশ্ন হল এই আলোটি কোথাথেকে আসে বা কিভাবে সৃষ্টি হয়?
এই আলোটিকে ইংরেজিতে 'অরোরা' এবং বাংলায় মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বলা হয়ে থাকে। এই অরোরা বা মেরুজ্যোতি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পৌরাণিক গল্প প্রচলিত আছে। তবে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণার পর এই আলো সৃষ্টির আসল কারণটি খুঁজে বার করেন। বিজ্ঞানীদের মতে সূর্যের থেকে আলো ও তাপের সাথে সাথে কিছু তরিতগ্রস্থ কনাও পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। এই তড়িৎ গ্রস্ত কনাগুলি সাধারণত, পৃথিবীকে ঘিরে থাকা ম্যাগনেটোস্ফিয়ার এর কারণে  পৃথিবীতে পৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারেনা। তবে দুই মেরু অঞ্চলে এই ম্যাগনেটোস্ফিয়ার এর স্তর টি অনেকটা পাতলা হয়। যার কারণে সূর্যের থেকে আসা তড়িৎ গ্রস্ত কণাগুলি ওই অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের প্রবেশ করে যায়। এবং বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এই ধরনের রঙিন আলো সৃষ্টি হয়।

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন