কৃত্রিম বৃষ্টি কী এবং কিভাবে কাজ করে?

আর্টিফিসিয়াল রেইন বা কৃত্রিম বৃষ্টি কথাটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেরই কৃত্রিম বৃষ্টির বিষয়টি ভালোভাবে জন্য নেই। তাই আজ আমরা এই কৃত্রিম বৃষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।

আর্টিফিশিয়াল রেন হল এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে আকাশে উড়ে বেড়ানো মেঘ গুলিকে বৃষ্টি রূপে ঝরে পড়তে বাধ্য করা হয়। এই প্রযুক্তিকে ইংরেজিতে ক্লাউড সিডিং বলা হয়ে থাকে। আর বর্তমান সময়ে দুবাই, সাংঘাই ও বেজিং এর মত শহরগুলিতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এখন প্রশ্ন হল এই ক্লাউড সিডিং টেকনোলজি আসলে কী? এবং কিভাবেই বা কাজ করে? আর সত্যিই যদি এই টেকনোলজি কাজ করে তাহলে কি আমাদের দেশের খরা ও বন্যার মত পরিস্থিতি গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে? নাকি প্রকৃতির স্বাভাবিক কাজে বাধা দেওয়ায় কোনো ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে? আজকে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানব।

artificial-rain-image

কৃত্রিম বৃষ্টি সম্পর্কে জানার আগে আমাদের প্রাকৃতিক বৃষ্টি সম্পর্কে ভালো ভাবে জানা উচিত।

◼ প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত:

প্রাকৃতিক বৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রথমে সূর্যের তাপে সমুদ্র, নদী, পুকুর ইত্যাদি জলাশয়ের জল বাষ্পে পরিণত হয়। এই জলীয় বাষ্প বায়ুর থেকে হালকা হওয়ায় উপরের দিকে উঠতে থাকে। আর এটা তো আমরা সবাই জানি যে বায়ুমণ্ডলের যতটা ওপরের দিকে ওঠা যায় ঠান্ডা ততটাই বাড়তে থাকে। তাই জলীয় বাষ্প একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় ওঠা মাত্রই প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে ছোট ছোট জল কণায় পরিণত হয়। এরকম অসংখ্য জল কণা বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে অবস্থান করে গঠিত হয় মেঘ। মেঘের এই জলকণা গুলি এতটাই ক্ষুদ্র হয় যে বায়ু প্রবাহের সাথে সাথে আকাশে ভেসে বেড়াতে থাকে। তবে এই জলকণার মধ্যে যখনই বায়ুতে থাকা ধূলিকণা প্রবেশ করে তখনই ওই ধূলিকণা কে ভর করে ছোট ছোট জল কণা গুলি একে অপরের সাথে যুক্ত হতে থাকে। এইভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত হতে হতে একটা সময় বড় জলের ফোঁটায় পরিণত হয়। আর এই বড়ো জলের ফোঁটা গুলি তখন যথেষ্ট ভারি হয়ে যাওয়ায় পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানে মাটিতে ঝরে পড়তে শুরু করে। যাকে আমরা বলে থাকি বৃষ্টিপাত।

এইভাবে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে প্রাকৃতিক ভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এবার আমরা জানবো কৃত্রিম বৃষ্টি অর্থাৎ ক্লাউড সিডিং সম্পর্কে।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত:

১৯৪৬ সালের জুলাই মাসে ভিন্সেন্ট শেফার্ড নামে এক মার্কিন আবহাওয়াবিদ প্রথমবার ক্লাউড সিডিং সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি বলেন যদি কোনো পদার্থের দ্বারা মেঘের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জল কণা গুলিকে একত্রিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি চালু করা যায়, তাহলেই বৃষ্টিপাত ঘটানো যাবে। এরপরই সেই বছরই নভেম্বর মাসে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আকাশে ভাসমান মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। তারপর বিশ্বের বড় বড় গবেষণা সংস্থা বিভিন্ন পদার্থ ব্যবহার করে এই পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা চালাতে শুরু করে। তবে সবথেকে ভালো সাফল্য পাওয়া যায় সিলভার আয়োডাইড নামে একটি রাসা়নিক পদার্থ ব্যবহার করায়।

এই পদ্ধতিতে প্রথমে রাডার সিস্টেমের মাধ্যমে টার্গেট এরিয়ার আকাশে মেঘের উপস্থিতি ও গতিবিধি ভালোভাবে লক্ষ্য করা হয়। মেঘের উপস্থিতি সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া মাত্রই একটি এরোপ্লেনে সিলভার আয়োডাইড এর বার্নার নিয়ে রওনা দেওয়া হয় ওই মেঘের উদ্দেশে। এরপর ওই মেঘের ওপর থেকে সিলভার আয়োডাইড এর বার্নার গুলিকে মেঘের মধ্যে ফায়ার করা হয়। এর ফলে মেঘের সর্বত্র সিলভার আয়োডাইড এর কণা গুলি ছড়িয়ে পরে। সিলভার আয়োডাইড এর কণা গুলি মেঘের মধ্যে প্রবেশ করা মাত্রই কণা গুলিকে ভর করে মেঘের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা গুলি পরস্পরের সাথে দ্রুত গতিতে যুক্ত হতে থাকে। ফলে একসময় ওই অতি ক্ষুদ্র জলকণা গুলি মিলিত হয়ে বড় বড় জলের ফোটার আকার ধারণ করে। এই বড়ো জলের ফোঁটা গুলি তখন যথেষ্ট ভারি হওয়ায় পৃথিবীর অভিকর্ষের টানে মাটিতে বৃষ্টি রূপে ঝরে পড়তে থাকে। এইভাবে কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টিপাত ঘটানো হয় বলে এটিকে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বলে।

এখন প্রশ্ন হলো এই পদ্ধতি যখন সত্যিই কাজ করে তাহলে খরা ও বন্যার মত পরিস্থিতি গুলি কি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?

আসলে এর উত্তরে বলা যায় কিছুটা হলেও সম্ভব। তবে এই পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন এই পদ্ধতি যথেষ্ট ব্যয়বহুল। এবং এই পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্য বহুদিনের রিসার্চ ও অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া আরেকটি বিষয় হলো সাইড ইফেক্ট অর্থাৎ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। প্রতিটা জিনিসের যেমন ভালো দিক থাকে আবার খারাপ দিকও থাকে। এর ক্ষেত্রেও তেমন।
কোন অঞ্চলে মেঘ থেকে জোর করে বৃষ্টিপাত ঘটালে অন্য অঞ্চলে বৃষ্টির অভাব পড়বে। অর্থাৎ প্রকৃতির স্বাভাবিক কাজে বাধা দেওয়ার জন্য আবহাওয়ার গোল যোগের একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। এবং ক্লাউড শেডিং এর জন্য যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হবে সেগুলি বৃষ্টির সঙ্গে ঝরে পড়ে জল দূষণ ও মৃত্তিকা দূষণ ঘটাতে পারে। তবে কিছু কিছু দেশ ক্লাউড সিডিঙ এর জন্য সিলভার আয় ডায়েট এর বিকল্প খুঁজে চলেছে। যাতে দূষণের সমস্যাকে এড়ানো যায়।

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন