মিশরের পিরামিড কেন তৈরি করা হয়েছিল?

মিশরের পিরামিড পৃথিবীর প্রাচীন পাঁচটি সাত আশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম। আসলে এটি আজও একটি আশ্চর্যকর জিনিস তো বটেই। আজ থেকে প্রায় 4500 বছর আগে মিশরের গিজাতে মিশরীয়রা পরপর তিনটি পিরামিড নির্মাণ করেছিলেন। যার মধ্যে সবথেকে বড় টির নাম ছিল খুফুর পিরামিড। এর উচ্চতা হল 147 মিটার। এটি তৈরি হওয়ার পর, পরবর্তী 4000 বছর পর্যন্ত এটিই ছিল মানুষের দ্বারা নির্মিত সবচাইতে উঁচু নির্মাণ কার্য। এবং এর সম্পূর্ণ ওজন প্রায় 6,000,000 টন। যে ওজনটা আজকের দিনে নির্মিত সবচেয়ে উঁচু ইমারত আরবের বুর্জ খলিফার থেকেও অনেক বেশি।


how-pyramids-were-built
Image source:pixabay.com

এখন আশ্চর্যের বিষয় হল যে সময়ে দাঁড়িয়ে মিশরীয়রা এই পিরামিড গুলোকে নির্মাণ করেছিলেন সেই সময়ে মানুষ চাকার ব্যবহার জানতো না। জানতোনা লোহার ব্যবহারও। তাহলে আজ থেকে প্রায় 4500 বছর আগে কোন উন্নত যন্ত্রাংশ ছাড়াই তারা কিভাবে এই বিশাল পিরামিড গুলিকে নির্মাণ করেছিল? এবং নিরামিড তৈরিতে তারা এমন কোন টেকনোলজি ব্যবহার করেছিল যার কারণে, এত বছর ধরে রোদ,  ঝর, বৃষ্টি সহ্য করেও পিরামিড গুলি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে?


মিশরের এই পিরামিড গুলি কেন তৈরি করা হয়েছিল আর কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল এই বিষয়ে সবটা আজ আমরা আলোচনা করব।


◼ মিশরের পিরামিড কেন তৈরি করা হয়েছিল?

অনুমান করা হয় 2560 খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরে এই পিরামিড গুলিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। তখনকার সময়ে মিশরের রাজাদের ফ্যারাও বলা হতো। অনেকে মনে করেন ওই ফ্যারাওদের সমাধি দেওয়ার জন্য এই পিরামিড গুলি তৈরি করা হয়েছিল। মিশরের প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, মৃত্যুর পরেও একটা জীবন আছে। তাই ফ্যারওদের মৃত্যুর পর তাদের পছন্দের জিনিস গুলি, গহনা, পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী পিরামিডের মধ্যে মজুত করে রাখা হতো। এবং সেই সঙ্গে ফ্যারাওদের মৃতদেহকে ওষুধ মাখিয়ে ও কাপড় জড়িয়ে মমি বানিয়ে কাঠের বাক্সে ভরে পিরামিডের মধ্যে রেখে দেওয়া হতো।


তবে পিরামিডের ভেতরে যথাযথ কোনো প্রমাণ না মেলায়, পিরামিড তৈরির একেবারে সঠিক কারণ নিয়ে অনেকের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু ও অন্যান্য পিরামিড থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঐতিহাসিক ও বিশেষজ্ঞরা এই মতবাদকেই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন।


পিরামিড কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল?

এই পিরামিড গুলিকে মিশরীয়রা কিভাবে তৈরি করেছিল তা একদম সঠিক ভাবে বলা সত্যিই অসম্ভব। তবে পিরামিড সংলগ্ন অঞ্চল থেকে পাওয়া প্রস্তর চিত্র ও অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে ঐতিহাসিকরা বেশ কয়েকটি যুক্তি সংগত মতবাদ প্রকাশ করেন। ঐতিহাসিকদের মতে, পিরামিড তৈরির আগে মিশরীয়রা একটি সমতল জায়গা খুঁজে বের করত। কারণ তারা এটা ভালো করেই জানত যে এই বিশাল ওজন ও উচ্চতা বিশিষ্ট পিরামিড গুলিকে দার করানোর জন্য মজবুত ও সমতল জমি প্রয়োজন। তারপর আনা হতো পিরামিড তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পাথর। পিরামিড তৈরির জন্য তারা যে পাথর গুলি ব্যবহার করেছিল তার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল চুনাপাথর। যেগুলি তারা 800 কিলোমিটার দূর থেকে বয়ে এনেছিল। এই পাথর গুলির এক একটির ওজন ছিল 2.5 টন থেকে 80 টন


এই পাথর গুলিকে তারা কাঠ ও তামার তৈরি হাতিয়ার দিয়ে সঠিক মাপে কাটত। সেই সময় লোহার ব্যবহার না জানা থাকলেও তারা তামার ব্যবহার জানতো। তাই প্রায় প্রতিটি যন্ত্রাংশেই তামার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।


পাথর গুলিকে সঠিক মাপে কাটার পর কাঠের স্লেজের মাধ্যমে তারা পিরামিডের স্থানে নিয়ে আসত। অর্থাৎ, কাঠ দিয়ে একটি পাতি তৈরি করা হতো, আর তার ওপরে পাথর গুলিকে চাপিয়ে দেওয়া হতো। ওই কাঠের পাতির সঙ্গে বেশ কয়েকটি দড়ি বাঁধা হত, আর সেই দড়ি গুলিকে সামনে থেকে কিছু লোকে টানত এবং পেছন থেকে কিছু লোক ঠেলত। সেই সময় মানুষ চাকার ব্যবহার জানতো না তাই, ওই কাঠের স্লেজ গুলিতে কোনোরকম চাকার ব্যবহার হয়নি। মাটির সঙ্গে কাঠের পাতির ঘর্ষণ কমাতে মাটিতে জল দেওয়া হতো।


অনেকের মতে, জলপথের মাধ্যমে ভাসমান কাঠের গুরী ব্যবহার করে পাথর গুলিকে পিরামিড পর্যন্ত নিয়ে আসা হতো।


পাথর গুলিকে যথাযথ স্থানে আনার পর হাজার হাজার শ্রমিকরা মিলে শুরু করতো পিরামিড নির্মাণের কাজ। পাথর গুলিকে একটি ওপরে আর একটিকে রাখার জন্য তারা একপ্রকার নততল ও কাঠের তৈরি কপিকল জাতীয় কিছু ব্যবহার করতো। অর্থাৎ মাটি বা কাঠ দিয়ে ওপরের দিকে ঢালু একটি গড়ান মত তৈরি করা হতো। আর তারপর কাঠের কপিকল ও দড়ি ব্যবহার করে পাথর গুলিকে ওপরে তোলা হতো। এইভাবে পিরামিডের এক একটি তলা সম্পুর্ণ হলে নততলের উচ্চতা একটু একটু করে বাড়ানো হতো।


এক্ষেত্রে অনেকে বলেন, মিশরীয়রা পাথরগুলোকে ওপরে তোলার ক্ষেত্রে হয়তো তারা কোনো ধরনের কাঠের লিভার ব্যবহার করতো। 


তবে ঐতিহাসিকরা প্রথম মতামতটিকেই বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।


মনে করা হয় প্রাচীন মিসরীয়রা এইভাবেই পিরামিড গুলিকে নির্মাণ করে ছিল।

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন