কিভাবে জলের ওপর ব্রিজ তৈরি করা হয়?

আমরা হয়তো আজ পর্যন্ত এমন অনেক ব্রিজ দেখেছি যেগুলির পিলার জলের মধ্যে অবস্থিত। আর জলের মধ্যে থাকা ওই পিলার গুলি দেখে আমাদের মাথায় এই প্রশ্ন হয়তো অবশ্যই এসেছে যে জলের ওই পিলার গুলিকে কিভাবে তৈরি করা হয়? কারণ আমরা তো জানি জলের মধ্যে সিমেন্ট দিয়ে কিছু তৈরি করা কখনই সম্ভব না। তাহলে, ইঞ্জিনিয়াররা এমন কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করে যার ফলে জলের মধ্যে তৈরি হওয়া ওই পিলার গুলি ব্রিজের লক্ষ লক্ষ টন ওজন সহ্য করতে পারে? এই বিষয়ে সবটা আজ বিস্তারিত ভাবে জানব।

how-bridges-are-built-over-water

আসলে, ব্রিজ তো বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে কোথায় কি ধরনের ব্রিজ তৈরি করা হবে সেটা ইঞ্জিনিয়াররা ঠিক করে সেই জায়গাটিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার পর। কোনো ছোট নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করার প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে নদীর দুই পারে দুটি পিলার বসালেই তার ওপর ব্রিজ চাপানো যায়। তবে নদী যদি অনেকটা চওড়া হয় তাহলে, ব্রিজের মাঝের অংশের ভর রাখার জন্য কিছু পিলারকে জলের মধ্যে বানাতেই হয়। আর তখন জলের মধ্যে সেই পিলার গুলিকে তৈরি করায় ইঞ্জিনিয়ার দের কাছে সবথেকে বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

জলের মধ্যে পিলার তৈরি করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার দের কাছে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। যার মধ্যে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয় কোফার ড্যাম (Cofferdam) পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রথমে লোহার পাতি জুড়ে জুড়ে একটি মজবুত চোঙ আকৃতির গঠন তৈরি করা হয়। এই চোঙ আকৃতির গঠনটি কতটা লম্বা হবে সেটা ঠিক করা হয় জলের গভীরতা অনুযায়ী। প্রয়োজন মত এই এটিকে কোন কোন সময় গোলাকারের বদলে চৌকো আকৃতিরও বানানো হয়। চোঙ টি তৈরির কাজ সম্পন্ন হলে সেটিকে জাহাজের সাথে যুক্ত ক্রেন মেসিনের মাধ্যমে জলের মধ্যে যথা যথ স্থানে বসিয়ে দেওয়া হয়। এরপর একটি মেসিনের মাধ্যমে ওপর থেকে আঘাত করে করে সেটিকে জলের নিচে থাকা মাটিতে ভালোভাবে পুতে দেওয়া হয়। মাটির নিচে ভালোভাবে পোতা হয়ে গেলে মোটর ও পাম্পের মাধ্যমে এর ভেতর কার সমস্ত জল বাইরে বের করে দেওয়া হয়। এটি আসলে জলের মাঝখানে একপ্রকার বাধ হিসেবে কাজ করে। তাই ইঞ্জিয়ারিং এর ভাষায় এটিকে কোফার ড্যাম (Cofferdam) বলা হয় থাকে।

cofferdam-in-water
Cofferdam

এই কোফার ড্যাম এর ভেতরকার সমস্ত জল বের করে দেওয়া হলে জলের নিচে থাকা মাটির স্তরটি বেরিয়ে আসে। তারপর সেই মাটির ওপর শুরু হয় পিলার নির্মাণের কাজ। এক্ষেত্রে জলের গভীরতা যত বেশি হয় পিলার তৈরির কাজ ততটাই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়। পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে কোফার ড্যাম টিকে আবার আস্তে আস্তে খুলে নেওয়া হয়।

তবে জলের গভীরতা অনেক বেশি হলে কোফার ড্যাম পদ্ধতি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তাই সে ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়াররা একটি বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। যার নাম হল বেটার্ড পাইল্স (Battered Piles)। এই পদ্ধতিতে লোহার তৈরি বিশাল বড় বড় পাইপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই বিশাল আকৃতির পাইপ গুলিকে প্রথমে জাহাজের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় সঠিক লোকেশনে। এরপর মেশিনের মাধ্যমে পাইপ গুলিকে সোজাসুজিভাবে নামিয়ে দেওয়া হয় জলের মধ্যে। সেই সঙ্গে অপর একটি মেশিনের সাহায্যে উপর থেকে চাপ দিয়ে পাইপ টিকে জলের নিচে মাটির গভীরে ভালো করে পুঁতে দেওয়া হয়। পাইপ টিকে ভালো করে পোতা হয়ে গেলে এর ভেতরকার সমস্ত জল বের করে দেওয়া হয়। এরপর খালি পাইপ টিকে ভর্তি করা হয় সিমেন্ট, বালি ও পাথরের মিশ্রণ দিয়ে। প্রয়োজন মত এরকম একাধিক পাইপ প্রস্তুত করে জুড়ে দেওয়া হয় একটিকে আরেকটির সাথে। যার ফলে সবকটি পাইপ একসাথে মিলে ব্রিজের বিশাল ওজন সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করে।


এইভাবে বেটার্ড পাইলস পদ্ধতি বা কোফার ড্যাম পদ্ধতি ব্যবহার করে একদিকে চলতে থাকে পিলার তৈরির কাজ এবং অন্যদিকে সেই সঙ্গেই চলতে থাকে ব্রিজের ব্লক তৈরির কাজ। ব্রিজের ব্লগ সহ অন্যান্য সামগ্রী গুলোকে আলাদাভাবে কারখানায় প্রস্তুত করা হয়। এরপর বড় বড় জাহাজ ও ক্রেন মেসিনের মাধ্যমে সেগুলিকে পিলারের সাথে মজবুত ভাবে সেট করে দেওয়া হয়। সমস্ত অংশগুলিকে ভালো ভাবে যুক্ত করে দেওয়ার পর ওই ব্রিজের অপর দিয়ে সড়ক পথ বা রেলপথ নির্মাণ করা হয়। এইভাবেই ইঞ্জিনিয়ারদের প্ল্যানিং মতো ধাপে ধাপে একটি ব্রিজকে রেডি করা হয়।

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন