শক্তি কী? শক্তি কত প্রকার ও কী কী?

▣ শক্তি:
এক কথায় বলতে গেলে, কাজ করার সামর্থকে শক্তি বলা হয়। শক্তিকে আমরা সরাসরি চোখে দেখতে পারি না। তবে শক্তি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। অর্থাৎ সরাসরি চোখে দেখা না গেলেও এর উপস্থিতি অস্বীকার করা যায় না। এটি বিভিন্ন রূপে থাকতে পারে। আবার এক রূপ থেকে আর এক রূপে পরিবর্তিতও হতে পারে। বিজ্ঞানের মতে শক্তিকে সৃষ্টিও করা যায় না আবার ধ্বংসও করা যায় না। শুধুমাত্র শক্তিকে এক রূপ থেকে আরেক রূপে পরিবর্তিত করা যায়।

many-types-of-energy
Image source: pixabay.com

শক্তির বিভিন্ন রূপ:
শক্তির প্রভাবে পদার্থের বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করে শক্তিকে প্রধানত আট ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা:

1. যান্ত্রিক শক্তি:
কোন বস্তু তার অবস্থান, গতি বা আকৃতির জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে যান্ত্রিক শক্তি বলে। যান্ত্রিক শক্তি আবার দুই প্রকার যথা- গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তি।

i) গতিশক্তি: কোন গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য যে কার্য করার সামর্থ্য লাভ করে তাকে গতিশক্তি বলে। যেমন- কোন ঢিলকে যদি কোন জানালার কাঁচ লক্ষ্য করে ছোড়া হয় তাহলে দেখা যাবে ঢিলটি জানালার কাঁচ ভেদ করে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করবে। এখানে, ঢিলটি ছোড়ার ফলে প্রথমে ঢিলটি গতিশক্তি লাভ করল। এবং ওই গতিশক্তির কারণে সেটি জানালার কাঁচ টি ভাঙার সামর্থ্য লাভ করল।

ii) স্থিতিশক্তি: কোন বস্তুর স্বাভাবিক অবস্থান বা আকৃতির পরিবর্তনের ফলে বস্তুটিতে যে শক্তি জমা হয় তাকে স্থিতিশক্তি বলে। যেমন- দম দেওয়া ঘড়ির ক্ষেত্রে, দম দিলে ঘড়ির স্প্রিংটি সংকুচিত হওয়ার ফলে স্প্রিংটির আকৃতির পরিবর্তন হয়। ফলে স্প্রিংটি তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য একপ্রকার শক্তি লাভ করে। আর এই শক্তিকে কাজে লাগিয়েই ঘড়িটিকে সচল রাখা হয়। অর্থাৎ বলা যায়, স্প্রিংটি সংকুচিত হওয়ার ফলে তার মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয়েছিল।

2. তাপ শক্তি:
তাপকে কাজে লাগিয়েও নানা রকমের কার্য করা হয়ে থাকে। তাপের প্রভাবেও বস্তু কাজ করার সামর্থ্য লাভ করতে পারে তাই তাপ হল একপ্রকার শক্তি। যেমন- তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রচুর পরিমাণ তাপ উৎপাদন করে প্রথমে জলকে বাষ্পে পরিণত করা হয়। এবং তারপর ওই বাষ্পের চাপকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এখানে তাপ শক্তির কারণেই জলীয় বাষ্প টারবাইনটিকে ঘোরানোর সামর্থ্য লাভ করে।

3. আলোক শক্তি:
আমাদের পৃথিবীর মোট শক্তির একটা বড় অংশ এই আলোক শক্তির উপরে নির্ভরশীল। কারণ আমরা জানি পৃথিবীর শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস হলো সূর্য। আর সূর্য থেকে শক্তি আলোক শক্তি রূপেই পৃথিবীতে প্রবেশ করে। সূর্যের আলোর মাধ্যমেই গাছেরা তাদের সবুজ অংশে খাদ্য তৈরি করে। তাই আলোক একপ্রকার শক্তি।

4. শব্দ শক্তি:
যুদ্ধের সময় বোমা ফাটার প্রচন্ড জোড়ালো শব্দে অনেক সময় জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। অর্থাৎ, শব্দের মধ্যেও কার্য করার সামর্থ্য রয়েছে। তাই শব্দ এক প্রকার শক্তি।

5. চৌম্বক শক্তি:
কোন চুম্বককে লোহার তৈরি কোন বস্তুর কাছে নিয়ে গেলেই দেখা যায় চুম্বক টি বস্তুটিকে আকর্ষণ করছে। চুম্বকের মধ্যে এক প্রকার শক্তি থাকে বলেই লোহাকে আকর্ষণ করার সামর্থ লাভ করে। সুতরাং চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতাও একপ্রকার শক্তি।

6. বিদ্যুৎ শক্তি:
বিদ্যুৎ বা তড়িৎ এর মাধ্যমে আমরা লাইট, পাখা, টিভি ইত্যাদি চালিয়ে থাকি। তাই বিদ্যুৎ বা তড়িত একপ্রকার শক্তি।

7. রাসায়নিক শক্তি:
রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে রাসায়নিক শক্তি বলা হয়। যেমন- চুনে জল ঢালার ফলে তাপ উৎপন্ন হয়।

8. পারমাণবিক শক্তি:
বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় মৌল যেমন ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, প্লাটোনিয়াম প্রভৃতি মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াস কে বিভাজন ঘটালে যে নতুন মৌল পাওয়া যায় তার ভর আদি মৌলটির ভোরের তুলনায় কিছুটা কম হয়। আর এই হ্রাস প্রাপ্তভর প্রবল পরিমাণ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। যাকে নিউক্লিয় শক্তি বা পারমাণবিক শক্তি বলা হয়। বর্তমানে এই পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন